ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক শব্দার্থবিধির অন্যতম রূপকার, ভাষাবিদ ও দার্শনিক কলিম খান আর আমাদের মধ্যে নাই। কিছুদিন যাবৎ তিনি দুরারোগ্য রক্তের ক্যান্সারে (AML) ভুগছিলেন।
আজ (১১.০৬.২০১৮) সন্ধ্যায় কলকাতার বাঁশদ্রোণী এলাকায় নিজের বাসভবনে তিনি প্রয়াত হয়েছেন।
কলিম খান একজন বিশিষ্ট ভাষাতাত্ত্বিক এবং গবেষক, তিনি ও রবি চক্রবর্তী প্রাচীন বাংলাভাষার অনালোকিত অধ্যায় উন্মোচন করে ভাষার জগতে এক যুগান্তকারী আবিস্কার সম্ভব করেছেন যার মাধ্যমে প্রাচীন ভারতীয় শাস্ত্র ও ইতিহাসকে নতুন আলোয় চেনা সম্ভব হচ্ছে যা শুধু উপমহাদেশীয় সভ্যতাকেই নয়, বিশ্বসভ্যতা এবং জ্ঞান পরিমণ্ডলকেও আলোকিত করবে বলে আশা করা যায়।
বাংলাভাষার বিস্মৃত রূপ ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক শব্দার্থবিধিকে বাংলার পাঠকের কাছে হাজির করে তাঁরা আমাদের প্রাচীন গ্রন্থাবলীকে নতুনভাবে পাঠ করার এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন ইতিহাসকে আবিস্কার করার সুযোগ করে দিয়েছেন।
‘মৌলবিবাদ থেকে নিখিলের দর্শনে’, ‘দিশা থেকে বিদিশায়’, ‘পরমা ভাষার বোধন-উদ্বোধন’, ‘বাংলাভাষা: প্রাচ্যের সম্পদ ও রবীন্দ্রনাথ’, ‘অবিকল্পসন্ধান’ এবং দুই খণ্ডে নতুন বাংলা অভিধান ‘বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ’ প্রকাশ করে তাঁরা চেতনার নব দিগন্তকে প্রসারিত করেছেন পাঠকের সামনে।
এই দুই মনীষী তাঁদের এতকালের নিরবচ্ছিন্ন সাধনা ও আবিস্কারের বিপুল ঐশ্বর্যকে পাঠকের কাছে সারাৎসার হিসেবে পৌঁছে দেয়ার জন্য সম্প্রতি লিখেছেন চারটি প্রবন্ধ: ‘বাংলা ভাষার সম্পদ কোথায়’, ‘বাংলা ভাষার বিপদ কোথায়’, ‘বাংলা বাঁচলে সভ্যতা বাঁচবে’, ‘বন্ধন মুক্ত শব্দার্থের নমুনা’ যা একটি প্রধান শিরোনাম ‘বাংলা বাঁচলে সভ্যতা বাঁচবে’র অধীনে ন্যস্ত হয়েছে।
কলিম খানের কাছ থেকেই আমরা বুঝতে শিখেছি শব্দার্থের দর্শন, প্রাচীন ভারতের ইতিহাস ও ভারতীয় দর্শনকে। তিনি যে কাজের সূচনা করে গেলেন সেই কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আমাদের সকলের। তাঁর মৃত্যুতে আমি হারালাম আমার এক পথপ্রদর্শক, সুহৃদ এবং অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ও প্রিয় মানুষকে। তাঁকে আমাদের অন্তরের প্রণতি জানাই।